ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে আমের মুকুলে ঝলমল রূপে সেজেছে প্রকৃতি। মুকুলের ম ম গন্ধে চারদিক মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। আমগাছের দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকে এবার জেলায় প্রচুর আম উৎপাদন হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আমের মুকুলের সোনালি আভা আজ দৃশ্যমান পুরো জেলাতে। সকালের কড়া রোদের মধ্যে তাকালে মনে হয় সত্যি যেন আমগাছ থেকে সোনা ঝরছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আমগাছ রয়েছে। অনেকেই গড়ে তুলেছেন আমের বাগান। সদর উপজেলার শরিফপুর, নান্দিনা, বাঁশচড়া, শ্রীপুর, কেন্দুয়া, গোদাশিমলা বিস্তীর্ণ এলাকায় আমের বাগান রয়েছে। এসব এলাকার মাটি আম, লিচু ও কাঁঠালের জন্য খুবই উপযোগী। অন্য ফসলের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদি ও অর্থকরী ফসল চাষেই বেশি আগ্রহ এলাকাবাসী। এছাড়া জেলার সরিষাবাড়ি, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার কমবেশি সব জায়গাতেই বিভিন্ন জাতের আম চাষ করা হয়। পুরো উপজেলার প্রতিটি আমগাছে থোকায় থোকায় আমের মুকুল ফাল্গুনের সোনালি মিষ্টি রোদে ঝলমল রূপে সজ্জিত হয়ে ঋতুরাজ বসন্তকে সাদরে বরণ করে নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালপুর সদরের প্রায় প্রতিটি বসতবাড়ি, বাড়ির আঙিনা, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও আবাসিক ভবনের আশপাশে আমগাছের পাতাকে অনেকটা ঢেকে দিয়েছে আমের মুকুল। এক দশক আগে থেকে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে আমের বাগান করেছেন। আম বিক্রি করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন।
বাদেচাঁন্দি গ্রামের মোশারফ হোসেন জানান, এবার এলাকায় আমের ব্যাপক মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের ফলন ভালো হবে তিনি আশা করছেন। পলাশতলা গ্রামের আবু মুসা মিয়া বলেন, “আমাদের গ্রামে একাধিক ব্যক্তি আমের বাগান করেছেন। বাগানে উন্নত ও স্বাদে ভরপুর বিভিন্ন জাতের আমগাছ রয়েছে।”
আবু মুসা মিয়া আরও বলেন, “আমাদের এলাকায় সাধারণত যাদের বাড়িতে দু-চারটি আমগাছ রয়েছে তারা কোনো পরিচর্যা করে না। কিন্তু যাদের বাগান রয়েছে তারাই শুধু প্রতিটি গাছের পরিচর্যা, কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন।”
রানাগাছা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “গত বছর আমি আমার দুটি আমগাছ থেকে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১০-১২ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছি।”
এবার যে পরিমাণ মুকুল ধরেছে তা যদি নানা কারণে নষ্ট না হয় তাহলে প্রত্যেকেই আমের ভালো ফলন পাবে বলে তিনি মনে করেন।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার দিলরুবা ইয়াছমিন বলেন, “এ বছর আমের প্রচুর মুকুল হয়েছে। কিন্তু তা সঠিকভাবে পরিচর্যা এবং সময়মতো ওষুধ স্প্রে না করলে মুকুল নষ্ট হয়ে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য কৃষি বিভাগ থেকে যথাযথ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া যদি শেষ পর্যন্ত অনুকূল থাকে তাহলে এ বছর জামালপুর সদরে প্রচুর আম উৎপাদন হবে।”